একটি শিল্প বা বণিজ্য মানে বিশাল সংখ্যক মানুষের কর্মযজ্ঞ যেখানে কর্মীদের জীবিকার পাশাপাশি জড়িয়ে থাকে নানা স্বপ্ন। এ স্বপ্ন ছুঁয়ে যায় কারখানার মালিক থেকে শুরু ক্ষুদ্রতম কর্মচারীটি পর্যন্ত। সেই স্বপ্নের মধ্যে থাকে নিজে স্বাবলম্বী হওয়া, পরিবারের ভরণ-পোষণ, সন্তানের পড়াশোনা, নিজের শখ সহ আরো কত কি!
কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে স্বপ্নগুলোর অর্থনৈতিক ভিত্তি এসব শিল্প-কারখানা অনেক সময় কর্মী নিজে সহ তার পরিবারের জন্য ভয়াবহ দু:স্বপ্নের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কারখানায় কোন অনাকাঙ্খিত দূর্ঘটনা শ্রমিক বা কর্মকতাদের কখনো পঙ্গু করে দেয়, এমনকি ঘটে প্রাণহানীর মত ঘটনাও। হাজার হাজার মানুষের সাথে বিনিয়োগকারীদের জীবনেও নেমে আসে দুর্বিসহ পরিস্থিতি। সাধারণত মালিকপক্ষ এক্ষেত্রে নানা উপায়ে ক্ষতির কিছুটা কাটিয়ে উঠতে পারলেও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব থেকে যায় হতভাগ্য শ্রমিকদের জীবনে। আজ আমরা এমন কয়েকটি শিল্প দূর্ঘটনা সম্পর্কে তুলে ধরব।
নেদারল্যান্ড আতশবাজি কারখানায় বিস্ফোরণ
আগুন নিয়ে খেলো না এ কথাটি ছোটবেলা থেকে শুনে আসলেও বিয়ে বাড়ি, জন্মদিন বা কোন বড় উৎসবে যে জিনিসটি ছাড়া আনন্দ ঠিক জমে না সেটি হলো আতশবাজি। রাতের আকাশে ঝলমলে আলো দিয়ে আতশবাজি আমাদের আনন্দকে রাঙিয়ে তুললেও ভুল স্থানে তা জ্বলে উঠলে সেটি যে কতটা ভয়ানক হতে পারে তার উদাহরণ পাওয়া যায় নেদারল্যান্ডের এসঁচেদ (Enschede) শহরটিতে। শহরের এ প্রান্তে সাধারণত নিম্নবিত্ত মানুষের বসবাস ছিল যাদের বেশির ভাগেরই কোন ধারণায় ছিলনা যে এ কারাখানাটিতে কি পরিমান বিস্ফোরক গুদামজাত করা হচ্ছে।
২০০০ সালের মে মাসের ১৩ তারিখে কারখানায় আগুন লেগে যায়। একের পর এক বিস্ফোরকের কন্টেইনার আগুন লেগে বিস্ফোরণ হতে থাকে। বিস্ফোরণের সময় কারখানাটিতে প্রায় ১৭৭ টন আতশবাজি ছিল। এ বিস্ফোরনের প্রভাবে কারখানাটি সহ আশেপাশের ৫ শতাধীক ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। যার ফলে এ ঘটনায় প্রায় ৯৭৪ জন ব্যক্তি আহত হন এবং প্রাণ হারান ফায়ার সার্ভিসের ৪ জন কর্মকর্তা সহ মোট ২২ জন মানুষ। কারখানার আশেপাশের প্রায় ৩০ কিলোমিটার জুড়ে ধ্বংসযজ্ঞ ছড়িয়ে পড়ে। দূর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটন করা সম্ভব না হলেও এ ঘটনায় অবৈধভাবে অতিরিক্ত বিস্ফোরক মজুদের দায়ে তিনজন কর্তৃপক্ষের জেল হয়।

এ্যাক্সন তেলবাহী জাহাজ দূর্ঘটনা
এ্যাক্সন (Exxon) একটি তেলবাহী কন্টেইনার জাহাজ যেটি নিয়মিতভাব এক্সন কোম্পানীর অপরিশোধিত তেল পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। ২৪ মার্চ ১৯৮৯ সালে এটি একটি ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়ে যেটি আজও পর্যন্ত মানুষ দ্বারা সৃষ্ট অন্যতম বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয় বলে স্বীকৃত। ঘটনার দিন জাহাজটি দূর্ভাগ্যক্রমে প্রবাল প্রাচীরে আঘাত করে যার ফলে জাহাজের কাঠামোতে চিড় ধরে যায়। এতে জাহাজটি তলিয়ে না গেলেও জাহাজের ভেতরে থাকা তেল ছড়িয়ে পড়তে থাকে অ্যালাস্কার সমূদ্র উপকূলে।
অ্যালাস্কার ভ্যালদেজ (Valdez) বন্দর থেকে প্রায় ৫৩ মিলিয়ন গ্যালন অপরিশোধিত তেল নিয়ে জাহাজটি ক্যালিফোর্নিয়ার (California) উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল। বন্দর থেকে রওনা হবার কিছু সময়ের মধ্যেই জাহাজটি অনাকাঙ্খিত দূর্ঘটনার মুখে পড়ে। প্রবাল প্রাচীরে আঘাতের ফাটল দিয়ে প্রায় ১১ মিলিয়ন গ্যালন তেল ছড়িয়ে পড়ে প্রায় ১,৩০০ মাইল জুড়ে। অপারিশোধিত তেল এর প্রভাবে ২২টি তিমি, ২৫০ টি সামূদ্রীক সীল, ৩,০০০ সামূদ্রীক ভোঁদড়, ২৪৭টি ঈগলসহ প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির সামূদ্রীক মৎস্য শিকারী পাখি প্রাণ হারায়। পাশাপাশি বিশাল আয়তন জুড়ে দূষণের প্রভাবে এলাকাটি মৎস্য আহরণের অনুপযোগী হয়ে যায়। এ ঘটনায় এ্যাক্সন গ্রুপ তেল অপসারণ ও ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রায় ৩.৮ বিলিয়ন ডলার ব্যয় বহন করে।

আইসিএমএসএ কেমিক্যাল প্ল্যান্ট
ইতালির মিলান (Milan) শহরের উত্তরে সেভেসো (Seveso) শহরের সুইস (Swiss) কোম্পানী Hoffman-La-Roche এর একটি রাসায়নিক কারখানা ছিল যেটি, আইসিএমএসএ কেমিক্যাল প্ল্যান্ট (ICMSA Chemical Plant) নামে পরিচিত ছিল। এ প্লান্টটি মূলত কীটনাশক সহ বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদন করত। ১৯৭৬ সালের ১০ জুলাই প্লান্টের কিছু যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে পড়লে কন্টেইনারের বায়বীয় ডাইঅক্সিন টিসিডিডি (Dioxin TCDD) প্লান্ট থেকে বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া মারাত্মক বিষাক্ত এ গ্যাসটি সেভেসোর কৃষিজমিকে দূষিত করে ফেলে যার ফলে দীর্ঘদিন এসব আবাদি জমি চাষের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছিল।
এ দূষণের ঘটনায় প্রায় ৬০০ বাসিন্দাকে তাদের আবাসস্থল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। নি:শ্বাসের সাথে ডাইঅক্সিন গ্রহনের ফলে অসুস্থ্য হয়ে পড়া প্রায় ২,০০০ মানুষকে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এ ঘটনার পরপরই বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে রাসায়নিক কারখানাগুলির নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য আন্দোলন শুরু হয়। ফলে নিরাপত্তা জোরদারের জন্য বিভিন্ন নতুন আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। আজও পর্যন্ত সেভেসো শহরের বেশ কিছু অঞ্চল এ দূষণের ক্ষত বয়ে নিয়ে চলেছে।

ক্যুরিয়ার কয়লা খনি বিপর্যয়
এটি ইউরোপের ইতিহাসে সবথেকে ভয়াবহ খনি বিপর্যয়। ১৯০৬ সালের ১০ মার্চ সবকিছু অন্যান্য সাধারণ দিনের মতই চলছিল। খনিগুলিতে সাধারণত রাত দিন পালাক্রমে কাজ চলতেই থাকে। রাতের শ্রমিকরা ততক্ষণে সেদিনের মত কাজ শেষ করে বিশ্রামের প্রস্তুতি নিচ্ছে অন্যদিকে দিনের শিফটে কাজ করার শ্রমিকদের আনাগোনাও শুরু হয়েছে। হঠাৎ ভোর ৬টা ৩০ নাগাদ বিস্ফোরণের শব্দে গোটা খনি কেঁপে ওঠে। সাথে সাথে কয়লা খনির গাঢ় কয়লার ধোঁয়ায় ছেয়ে যায় খনি-গর্ভ।
ভেতরে থাকা শ্রমিকেরা জলন্ত কয়লার ধুলার মেঘে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে একের পর এক অচেতন হয়ে পড়তে থাকেন। খনির বাইরে থাকা শ্রমিকেরা তাৎক্ষণিক উদ্ধারকার্যে অংশ নিলেও এধরনের পরিস্থিতি সামাল দেবার মত পর্যাপ্ত জ্ঞান বা প্রশিক্ষণ কোনটিই তাদের ছিল না। ফলে উদ্ধারকর্মীরা সেখানে উপস্থিত হবার পূর্বেই প্রাণ হারায় প্রায় ১,০৯৯ জন হতভাগ্য শ্রমিক।

সান জুয়ানিকো
সান জুয়ানিকো (San Juanico) মেক্সিকোর একটি অন্যতম বড় শহর যেখানে মেক্সিকোর ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ শিল্প বিপর্যয় ঘটনা ঘটেছিল। ১৯৮৪ সালের নভেম্বরের ১৯ তারিখে শহরের তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাসের কন্টেইনারে থাকা তরল গ্যাস উত্তপ্ত হয়ে প্রথম বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এর থেকে ছড়িয়ে পড়া আগুন বাকি ট্যাংকগুলোকেও উত্তপ্ত করে তোলে এবং একের পর এক তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাসের কন্টেইনার বিস্ফোরণ হতে থাকে।
এভাবে প্রায় ১১ হাজার কিউবিক মিটার গ্যাস বিস্ফোরিত হয়। এর প্রভাবে প্রায় ৪০ হাজার বাসিন্দা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ৫ থেকে ৭ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা ঘরবাড়ি সম্পূর্ণভাবে বিস্ফোরিত হয়। এ ঘটনায় ৬০০ মানুষ প্রাণ হারায় এবং ৭ হাজার মানুষে আগুনে পুড়ে বা উত্তাপের কারণে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। ভয়াবহ বিস্ফোরণে প্রাণ হারানো মানুষদের মধ্যে মাত্র ২ শতাংশ মানুষকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। ভয়ঙ্করভাবে পুড়ে যাবার কারণে বাকী মৃতদেহের পরিচয় সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

টেক্সাস শহর বিপর্যয়
১৯৪৭ সালের ১৬ এপ্রিল টেক্সাস সমূদ্র বন্দরে আমেরিকার ইতিহাসে সবথেকে ভয়াবহ শিল্প বিপর্যয়টি ঘটে যায়। বন্দরে অবস্থান করা ফ্রান্সের এসএস গ্র্যান্ডক্যাম্প (SS Grandcamp) জাহাজটি থেকে এ দূর্ঘটনাটির সূত্রপাত ঘটে। জাহাজটিতে তখন প্রায় ২১ হাজার মেট্রিকটন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট (Ammonium Nitrate) বোঝাই করা ছিল। জাহাজটিতে আগুন লেগে গেলে শীঘ্রই তা অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট এর সাথে যুক্ত হয়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটাতে শুরু করে।
সর্বগ্রাসী আগুন আশেপাশে থাকা জাহাজ গুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে সমগ্র বন্দর আগুনে ছেঁয়ে যায়। বন্দরের জাহাজগুলি সহ জ্বালানী তেল সংরক্ষণাগারে আগুন ছড়িয়ে পড়লে বন্দরের আগুন নিয়ন্ত্রণ পরিস্থিতি সম্পূর্ণ হাতের বাইরে চলে যায়। প্রায় ৮৪৮৫ জন মানুষ এ ঘটনায় দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এবং প্রাণ হারায় ৫৮১ জন মানুষ। পারমানবিক বিস্ফোরণ নয় এমন বিস্ফোরণের দিক থেকে এটি অন্যতম একটি বৃহৎ আকৃতির বিস্ফোরণ হিসেবে বিবেচিত হয়।

চেরোনোবিল বিপর্যয়
নেটফ্লিক্স বা ফেসবুকের কল্যাণে বর্তমানে চেরোনোবিল (Chernobyl) নামটি মানুষের মুখে মুখে ঘুরছে। ১৯৮৬ সালের ২৬ এপ্রিল সোভিয়েত ইউনিয়নের এ পারমানবিক বিদ্যুতকেন্দ্রটি একটি ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়ে যা বর্তমানে ইউক্রেনে অবস্থিত যা চেরোনোবিল পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের নামটি সারা বিশ্বে পরিচিত করে তোলে। দূর্ঘটনার কারণ হিসেবে কর্মীদের গাফিলতি, রক্ষণাবেক্ষণে সতর্কতার অভাবসহ বিভিন্ন কারণকে দায়ী করা হয়ে থাকে।
মূলত ঘটনার দিন সকালে প্লান্টের একটি চুল্লি বিস্ফোরিত হয়ে বিশাল গহ্বরের সৃষ্টি করে। ফলে দাহ্য পারমানবিক পদার্থ বাতাসের সংস্পর্শে এসে বিরাট অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত ঘটায়। আগুন প্রায় ১০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী ছিল এবং পারমানবিক চুল্লির ক্ষতিকর রাসায়নিক বিকিরণ বিপুল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এ ঘটনায় প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং সমগ্র ক্ষয়-ক্ষতির আর্থিক মূল্য প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলার। আজও চেরোনোবিল শহরটি ক্ষতিকর পারমানবিক বিকিরণের কারণে পরিত্যক্ত হয়ে আছে।

বেনজিহু কলিয়ারি
বেনজিহু কলিয়ারি (Benxihu Colliery) চীনে অবস্থিত একটি কয়লা খনি যেটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে জাপানীদের দ্বারা পরিচালিত হত। ১৯৪২ সালের ২৬ এপ্রিল খনির প্রবেশ দ্বার থেকে গ্যাস এবং কয়লার বিস্ফোরণে ভয়াবহ আগুন ছড়িয়ে পড়ে। বাইরে থাকা শ্রমিকেরা দ্রুত খনিতে প্রবেশ করে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করতে গেলে জাপানী রক্ষীরা তাদের আটকে রাখে।
খনি গর্ভে আগুন ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে জাপানীরা খনিতে বাতাস সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়। যখন তারা প্রবেশ মুখ বন্ধ করা সহ বাতাস সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ করে তখনো খনি গর্ভে শ্রমিকেরা উদ্ধারের প্রতিক্ষায় ছিল। বাতাসের অভাব এবং ধোয়ায় ধীরে ধীরে তারা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। খনি গর্ভের আগুনও কার্যকরীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয় কর্তপক্ষ। এ ঘটনায় পরবর্তীতে জাপানী কর্তৃপক্ষকে দায়ী করা হয়। প্রায় ১০ দিন লেগে যায় সবগুলো মৃতদেহ উদ্ধার করতে। বিকৃতভাবে পুড়ে যাওয়ায় বেশিরভাগ শ্রমিকের লাশ সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এ দূর্ঘটনায় প্রাণ হারায় ১,৩২৭ জন খনি শ্রমিক।

ভূপাল বিপর্যয়
ভূপাল (Bhupal) বিপর্যয়কে ইতিহাসের সর্ব নিকৃষ্ট শিল্প দূর্ঘটনার মধ্যে একটি বলে বিবেচনা করে হয়ে থাকে। ভারতের মধ্যপ্রদেশে ইউনিয়ন কার্বাইড ইন্ডিয়া লিমিটেড এর কীটনাশক কারখানা থেকে এ বিপর্যয়ের সূচনা হয়। ১৯৮৪ সালের ৩ তারিখে অতিরিক্ত চাপের মুখে রাসায়নিক কন্টেইনার বিস্ফোরণ হলে তার থেকে প্রাণঘাতী বিপুল পরিমান গ্যাস বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভূপালের বেশির ভাগ মানুষ তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।
প্রাণঘাতী মিথাইল আইসোসায়ানেট (Mithyl isocyanate) বাতাসের সাথে রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে এমনকি ঘরের ভেতরেও প্রবেশ করে। নি:শ্বাসের সাথে এ বিষাক্ত গ্যাস গ্রহনের ফলে প্রাণ হারায় ৫,২৯৫ জন মানুষ। বেসরকারি হিসাব মতে এ সংখ্যা বিশ হাজারেরও বেশি। পাশাপাশি প্রায় ৬ লক্ষ মানুষ এ গ্যাসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হন।

রানা প্লাজা
দু:খজনক হলেও সত্য যে, পোশাক শিল্পের দূর্ঘটনার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয়টি ঘটেছিল আমাদেরেই দেশে। সার্বিকভাবে রানা প্লাজার গার্মেন্টস ধ্বস বিশ্বের শিল্প দূর্ঘটনার ইতিহাসে ৩য় বৃহত্তম শিল্প দূর্ঘটনা। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে ৮টা ৪৫ এর দিকে রানা প্লাজা ভবনটি ধ্বসে পড়ে। ভবন ধ্বসের ঘটনায় প্রাণ হারায় প্রায় ১,১২৯ জন মানুষ। আহত হন আরো ২,৫০০ জনেরও বেশি মানুষ।
এ দূর্টনার পর বাংলাদেশের শিল্প কারখানা বিশেষ করে গার্মেন্টস গুলোর নিরাপত্তা জোরদারকরণের জন্য আন্দোলন শুরু হয়। ভবনটি নির্মানে মানহীন উপকরণ ব্যবহার, ভবণটি ধ্বসে পড়ার পূর্বে ফাটল দেখা গেলে সে বিষয়ে সতর্কতা না মানা সহ নানা অভিযোগে ভবণের মালিককে দায়ী করে তাকে আটক করা হয়। এ ঘটনার পরবর্তীতে শিল্প স্থাপনাগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কিছুটা জোরদার করা হলেও তা পর্যাপ্তভাবে হয় নি। যার ফলশ্রুতিতে রানা প্লাজা ধ্বসের পরবর্তীতেও আমাদেরকে বেশ কয়েকটি শিল্প কলকারখানা দূর্ঘটনার স্বাক্ষী হতে হয়েছিল।

Feature Image: YÜKLE.MOBİ