“আঘাতের পর বিস্ফোরণের মাত্র ৭ মিনিটের মাথায় জাহাজটি তার যাত্রী সমেত তলিয়ে যায় সাগর তলে। কয়েকজন নিজেদেরকে ডুবে যাওয়া থেকে বাঁচাতে পারলেও বাল্টিক সাগরের হিম শীতল জল থেকে রক্ষা নিস্তার পাননি।”
মানব সভ্যতার শুরু থেকেই সমূদ্র আমাদের জন্য কৌতুহলের বিষয়। সমূদ্রকে জয় করার আদিম প্রবৃত্তি মিশে আছে আমাদের রক্তের সাথে। সময়ের সাথে সমূদ্রের বুকে আমাদের অধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হলেও এ যাত্রাপথ কখনোই মসৃণ ছিল না। ঝড়ের কবলে, জলদস্যুদের হাতে বা সমূদ্রে পথ হারিয়ে ঠিক কতজন মানুষের সমূদ্রে সলিল সমাধি হয়েছে তার সঠিক সংখ্যা হয়ত কখনোই বের করা সম্ভব নয়। তবে আজ আমরা ইতিহাসের সবথেকে আলোচিত দশটি জাহাজডুবি নিয়ে আলোচনা করব।
আরএমএস টাইটানিক
জাহাজডুবির কথা বলেতেই যে নামটি সাধারণত সবার প্রথমে মনে আসে সেটি হলো টাইটানিক (Titanic)। এটিকে নৌ-চলাচলের ইতিহাসে সবথেকে পরিচিত বা আলোচিত জাহাজ দূর্ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। টাইটানিক ছিল ইংল্যান্ডের একটি যাত্রীবাহী জাহাজ যেটি ১৯১২ সালের এপ্রিলে উত্তর আটলান্টিকের বরফ শীতল সমূদ্রে অনাকাঙ্খিতভাবে হিমশৈলে (Iceberg) আঘাত করে।

সে রাতে জাহাজটি ইংল্যান্ডের সাউদহ্যাম্পটন (Southampton) থেকে নিউ ইয়র্কের উদ্দেশ্যে এগিয়ে চলছিল বরফ শীতল পানির ওপর দিয়ে। রাত ১১টা ৪০ এর দিকে জাহাজটি হিমশৈলে আঘাত করে। সংঘর্ষে জাহাজের প্রায় ৯০ মিটার অংশ জুড়ে ফাটল ধরে যায়। জাহাজের কর্মীরা জাহাজটিকে বাঁচানোর যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালালেও সব প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে ২টা থেকে ২টা ২০ মিনিটের মধ্যে সম্পূর্ণ জাহাজটি সমূদ্রে তলিয়ে যায়।
কিছু সংখ্যক যাত্রী লাইফবোটে (Life Boat) জীবন বাঁচানোর সুযোগ পেলেও অন্যান্যদের ভাগ্য অতটা সুপ্রসন্ন ছিল না। অনেকেই টাইটানিকের সাথে তলিয়ে যায় আটলান্টিকের গভীর জলে, অনেকে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে থাকে উদ্ধার পাবার আগ পর্যন্ত ভেসে থাকার জন্য। তবে বেশির ভাগ হতভাগ্য যাত্রীই হিমশীতল সাগর জলে হাইপোথার্মিয়াতে (hypothermia) প্রাণ হারান।

ভোর ৪টা নাগাদ কারপাথিয়া (Carpathia) নামের একটি জাহাজ দূর্ঘটনার শিকার যাত্রীদের কাছে পৌঁছে। জাহাজটি সেখান থেকে লাইফবোটে ভেসে থাকা ৭১০ জন যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। তবে এ জাহাজ দূর্ঘটনায় প্রাণ হারায় পনেরো হাজার চৌদ্দ জন যাত্রী, যা বেসামরিক জাহাজডুবির ঘটনায় ৩য় বৃহত্তম দূর্ঘটনা।
হ্যালিফ্যাক্স বিস্ফোরণ
জাহাজ দূর্ঘটনা যে কেবল মাঝ সমূদ্র নয় বরং খোদ সমূদ্র বন্দরেই কতটা মর্মান্তিকভাবে ঘটতে পারে তার উদাহরণ পাওয়া যায় কানাডার হ্যালিফ্যাক্স সমূ্দ্র বন্দরের ঘটনার মধ্য দিয়ে। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের উত্তপ্ত সময়কালে এ বন্দরটি ভৌগলিক কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। রসদ ভর্তি করা, জাহাজ মেরামত বা যাত্রা পথে সাময়িক বিরতির জন্য বেসামরিক জাহাজের পাশাপাশি বিশেষ করে সামরিক জাহাজ এ বন্দরটি ব্যবহার করত।
১৬ ডিসেম্বর ১৯১৭ সালের সকালে নরওয়ের ত্রাণবাহী জাহাজ এস এস ইমো (SS IMO) বন্দরে নোঙর ফেলার জন্য অগ্রসর হচ্ছিল। একই সময়ে বিস্ফোরকবাহী বাষ্পচালিত ফরাসি জাহাজ এস এস মন্ট ব্লাঞ্চও (SS Mont-Blanch) বন্দরের দিকে এগিয়ে আসছিল অন্যদিক থেকে। দুটি জাহাজ যখন মুখোমুখি অবস্থানে চলে আসে তখন জাহাজের গতিপথ বদলানো বা গতি কমিয়ে আনার মত সময় আর ছিল না। অনিবার্যভাবে জাহাজ দুটি মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
সংঘর্ষের পরপরই ফরাসি জাহাজটিতে আগুন লেগে যায় এবং জাহাজে থাকা বিস্ফোরক গুলি ব্যাপক শব্দে বিস্ফোরিত হয়। প্রায় ২ হাজার ৯৩৫ টন বিস্ফোরক মুহূর্তের মধ্যে গোটা বন্দরকে ধ্বংস করে দেয়। প্রাণ হারায় প্রায় ২০০০ জন মানুষ। আরো প্রায় ৯ হাজার জন মানুষ এ বিস্ফোরণে আহত হন। আজও কানাডায় এ দূর্ঘটনার স্মরণে ”হ্যালিফ্যাক্স এক্সোপ্লোশন” নামে দিবসটি পালন করা হয় নানা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে।

আরএমএস লুসিতানিয়া
যাত্রীবাহী এ বৃটিশ জাহাজটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৯১৫ সালের ৭ মে জাহাজটি ইংল্যান্ড থেকে নিউইয়র্ক এর যাত্রা এগিয়ে চলছিল ১,৯৫৯ জন যাত্রী নিয়ে। যাত্রা পথে অযাচিতভাবে সাধারণ যাত্রীবাহী জাহাজটি জার্মান নৌ-বাহিনীর আক্রমনের শিকার হয়। বিধ্বংসী টর্পেডোর আঘাতে মাত্র ১৮ মিনিটের মাথায় গোটা জাহাজটি তলিয়ে যায়। চোখের নিমিষে প্রাণ হারায় ১,১৯৮ জন নিরীহ যাত্রী।

মাত্র ৭৬১ জন যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হলেও অন্যান্য যাত্রীদের বরণ করে নিতে হয় নির্মম পরিণতি। বেসামরিক এবং নিরীহ যাত্রীদের ওপর এমন ন্যাক্কারজনক আক্রমণের প্রতিবাদে জার্মান বিরোধী জনমত গড়ে উঠতে থাকে বিভিন্ন দেশে দেশে। লুসিতানিয়া হয়ে ওঠে জার্মান আগ্রাসন প্রতিরোধের প্রতীক।
এমভি লি জুলা
এম ভি লি জুলা (MV Le Joola) সেনেগালের (Senegale) এর একটি সরকারি ফেরি। ২০০২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর এটি জাম্বিয়া(Gambia) এর উদ্দেশ্যে যাত্রা করছিল। যাত্রা পথে ফেরিটি আকস্মিক ঝড়ের কবলে পড়ে মাত্রা পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ডুবে যায়। প্রলয়ঙ্করী ঝড়ের মুখে নিমিষেই প্রাণ হারায় প্রায় ১৮৬৩ জন মানুষ।

পরবর্তীতে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করার কারণে জাহাজটি ঝড়ের মুখে টিকে থাকার মত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়। ২০০০ জন যাত্রীর মধ্যে মাত্র ৬৪ জন মানুষ প্রাণে বাঁচতে সক্ষম হয়। জাহাজের মোট ৬০০ নারী যাত্রীর মধ্যে মাত্র একজন নারী মরিয়মা ডিউফ (Mariama Diouf) প্রাণে বেঁচে যান। ভদ্রমহিলা সেসময় অন্ত:সত্তা ছিলেন।
প্রাণহানীর দিক থেকে বিবেচনা করলে বেসামরিক নৌ-দূর্ঘটনার ইতিহাসে এমভি জুলা দ্বিতীয় বৃহত্তম বিপর্যয়।
ইউএসএস ইন্ডিয়ানাপোলিস
ইউএসএস ইন্ডিয়ানাপোলিস (USS Indianapolis) একটি মার্কিন সামরিক জাহাজ যেটি মার্কিন সামরিক বহিনীর পারমানবিক বোমার উপাদান পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হয়েছিল। হয়ত ইন্ডিয়ানাপোলিস সমূদ্রের মাঝে হারিয়ে না গেলে তার সাফল্যগাথা ও বীরত্ব নিয়ে গল্পটি ভিন্নভাবে লেখা হতো।

সফল অপারেশনের কারণে আলোচিত এ জাহাজটিই নিরব ঘাতক জাপানী সাবমেরিন এল-৫৮ এর শিকারে পরিণত হয় ১৯৮৫ সালের ৩০ জুলাই। বিধ্বংসী টর্পেডোর আঘাতে মাত্র ১২ মিনিটের মধ্যে সমুদ্রে তলিয়ে যায় ইন্ডিয়ানাপোলিস। জাহাজটি সাথে তলিয়ে যায় প্রায় ৩০০ জন নৌ-সেনা।
অন্যদিকে ৯০০ জন কোন রকমে ডুবে যাওয়া থেকে নিজেদের বাঁচাতে পারলেও উন্মুক্ত সমূদ্র প্রান্তরে শুরু হয় তাদের টিকে থাকার লড়াই। হাতেগোনা কয়েকটি লাইফবোটে নামমাত্র খাবার ও পানীয় নিয়ে প্রবল পানিশূণ্যতা, ক্ষুধা, হাঙরের আক্রমণ উপেক্ষা করে উদ্ধারের আশায় অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকেন বেঁচে যাওয়া নাবিকেরা। সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে মাত্র ৩১৭ জন নাবিক শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকতে সক্ষম হন। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে এটিই ছিল আমেরিকান নৌ-বাহিনী সর্বশেষ কোন বড় ধরনের সামরিক জাহাজডুবির ঘটনা।

আরএমএস ইম্প্রেস অব আয়ারল্যান্ড
আরএমএস ইম্প্রেস অব আয়ারল্যান্ডকে (RMS Empress of Ireland) বলা যায় কানাডার নৌ-ইতিহাসে আরেকটি দু:খজনক অধ্যায়। সমূদ্রগামী যাত্রীবাহী জাহাজটি ১৯১৪ সালে মে মাসের ২৯ তারিখ ভোরে সেন্ট লরেন্স (Saint Lawrence) নদীর ওপর দিয়ে এগিয়ে চলছিল। ঘন কুয়াশা ঘেরা নদীর অপরদিক থেকে এগিয়ে আসছিল নরওয়ের একটি কয়লাবাহী জাহাজ। আকৃতিতে কানডার জাহাজটির থেকে তুলনায় অনেক ছোট হলেও এ জাহাজটিই বড় বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

ঘন কুয়াশার মাঝে জাহাজ দুটি পরস্পরের অবস্থান নির্ণয় করেত ব্যর্থ হয়ে মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। প্রায় ১ হাজার যাত্রী নিয়ে জাহাজটি তলিয়ে যেতে শুরু করে। সংঘর্ষের পরপরই জাহাজে থাকা লাইফবোট গুলোকে জলে নামানোর চেষ্টা করা হলেও তার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়নি। ফলে বেশিরভাগ যাত্রীয় সেন্ট লরেন্সের হিম শীতল জলে তলিয়ে যান। মাত্র ৪৬৫ জন যাত্রীকে এ দূর্ঘটনার পর জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল।

এমভি গয়া
এমভি গয়া (MV Goya) ছিল একটি জার্মান যাত্রীবাহী জাহাজ। বিশাল এ জাহাজটি তার সর্বশেষ যাত্রায় ৬ হাজারের বেশি যাত্রী নিয়ে তখন বাল্টিক সাগর পাড়ি দিচ্ছিল। বরফ জমা সাগরের অন্ধকার জলে তখন ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে সোভিয়েত সাবমেরিন। সাবমেরিনের টর্পেডো প্রবল গতিতে এগিয়ে চলে তার অব্যর্থ নিশানার দিকে।
আঘাতের পর বিস্ফোরণের মাত্র ৭ মিনিটের মাথায় জাহাজটি তার যাত্রী সমেত তলিয়ে যায় সাগর তলে। কয়েকজন নিজেদেরকে ডুবে যাওয়া থেকে বাঁচাতে পারলেও বাল্টিক সাগরের হিম শীতল জল থেকে রক্ষা নিস্তার পাননি। ফলে অধিকাংশ যাত্রীরই সলিল সমাধি ঘটে বাল্টিক সাগরের হিম শীতল জলে। ৬ হাজার জন যাত্রীর মধ্যে মাত্র ১৮৩ জন যাত্রী এ মহাবিপর্যয় থেকে নিজেদেরকে জীবিত ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিল। প্রাণহানীর দিক থেকে বিচার করলে এটি ইতিহাসের দ্বিতীয় ভয়াবহ নৌ-বিপর্যয়।

আরএমএস ল্যাঙ্কাস্ট্রিয়া
ব্রিটিশ নৌ-পরিবহন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সবচে দু:খজনক নৌ-দূর্ঘটনা হিসেবে আমরা যাত্রীবাহী জাহাজ ল্যাঙ্কাস্ট্রিয়া (Lancastria) এর কথা বলতে পারি। এটি একটি সাধারণ যাত্রীপরিবাহী জাহাজ হলেও ল্যাঙ্কাস্ট্রিয়া যুদ্ধের সময় বৃটেনে এর নৌ-বাহিনী ও সরকারের নির্দেশ মত সেবা প্রদান করতে শুরু করে। ব্রিটিশ নৌ-বাহিনী জাহাজটিকে ফ্রান্সের সমূদ্র উপকূলে আটকে পড়া ব্রিটিশ সৈন্যদের উদ্ধারে অংশ নিতে পাঠায়। আরো অনেক জাহাজ, ছোট নৌকা এ অভিযানে অংশ নিলেও জার্মানদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে একে একে হারিয়ে যেতে থাকে।
ল্যাঙ্কাস্ট্রিয়ার প্রতি নির্দেশ ছিল জাহাজে যতজনকে সম্ভব তুলে উদ্ধার করে ব্রিটেনের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া। সে নির্দেশ মতো জাহাজে যতজনকে সম্ভব তুলে নেয় জাহাজটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কর্তাব্যক্তিগণ। ধারণ ক্ষমতার তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যক যাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করে জাহাজটি। যথারীতি মাঝ সমূদ্রে জার্মান বোমারু বিমানের মুখে পড়ে জাহাজটি। প্রায় তিন থেকে চারটি বোমা আঘাত হানে ল্যাঙ্কাস্ট্রিয়া এর ওপর। জাহাজের ডেকে থাকা অনেকেই আগুন থেকে বাঁচতে সমূদ্রে ঝাঁপ দেন। তবে বিশাল উচ্চতার এ জাহাজ থেকে পড়ে ঘাড়, হাত পা ভেঙে তলিয়ে যান তারা।

অন্যদিকে জাহাজ থেকে জ্বালানী তেল ছড়িয়ে পড়ে সমূদ্রে। জার্মান বিমান থেকে ছুঁড়ে দেওয়া ফ্লেয়ারে আগুন ধরে যায় সমূদ্রে ভাসমান তেলে। ফলে সমূদ্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভাসমান যাত্রীদের অনেকেই আগুনে পুড়ে মারা যায়। এভাবে চোখের পলকেই প্রাণ হারায় আনুমানিক প্রায় ৪ হাজার মানুষ, যদিও ধারণা করা হয় প্রকৃত সংখ্যা এর থেকে অনেক বেশি। এভাবে ল্যাঙ্কাস্ট্রিয়া ব্রিটেনের নৌ-ইতিহাসে একটি দু:খজনক অধ্যায় হিসেবে স্থান করে নেয়।
এমভি ডোনা পজ
বেসামরিক নৌ-চলাচল এবং নৌ-দূর্ঘটনার ইতিহাসে সবচে মর্মান্তিক অধ্যায়ের নামে এমভি ডোনা পজ (MV Dona Paz)। ১৯৮৭ সালের ২০ ডিসেম্বর ফিলিপাইনের এ জাহাজটি ৪,৩৭৫ জন যাত্রী নিয়ে রাতের আঁধার ভেদ করে এগিয়ে চলেছে তার গন্তব্যে। সবকিছু ঠিকঠাক ভাবেই চলছিল। সে সময় তার বিপরীত দিক থেকে পূর্ণ গতিতে এগিয়ে আসছিল আরেকটি জাহাজ এমটি ভেক্টর (MT Vector)। ৮ হাজার ৮০০ ব্যারেল গ্যাসোলিন (Gasoline) বোঝাই জাহাজটি আছড়ে পড়ে এমভি ডোনা পজের ওপর।মূহূর্তেই আগুন লেগে যায় দুটি জাহাজে।
অন্যদিকে একের পর এক গ্যাসোলিনের ব্যারেল বিস্ফোরিত হতে থাকে। পাশাপাশি গ্যাসোলিনের ব্যারেল গুলো ছড়িয়ে পড়ে সমূদ্রেও। সে রাতে যখন দুটি জাহাজ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তখন ডোনা পজের বেশিরভাগ যাত্রীই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ায় লাইফ বোট বা লাইফ জ্যাকেট কোনটিরই ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। অনেকেই গণগনে আগুন থেকে বাঁচতে বাধ্য হয়ে সমূদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সেখানেও ভেসে থাকা গ্যাসোলিনের ব্যারেল গুলো থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। সে রাতে আগুন গ্রাস করে নেয় হাজার হাজার যাত্রীর প্রাণ। প্রাণহানীর দিক থেকে বেসামরিক নৌ-দূর্ঘটনায় এটি হয়ে ওঠে সব থেকে কলঙ্কজনক অধ্যায়।

মূহূর্তেই আগুন লেগে যায় দুটি জাহাজে। অন্যদিকে একের পর এক গ্যাসোলিনের ব্যারেল বিস্ফোরিত হতে থাকে। পাশাপাশি গ্যাসোলিনের ব্যারেল গুলো ছড়িয়ে পড়ে সমূদ্রেও। সে রাতে যখন দুটি জাহাজ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তখন ডোনা পজের বেশিরভাগ যাত্রীই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ায় লাইফ বোট বা লাইফ জ্যাকেট কোনটিরই ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। অনেকেই গণগনে আগুন থেকে বাঁচতে বাধ্য হয়ে সমূদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সেখানেও ভেসে থাকা গ্যাসোলিনের ব্যারেল গুলো থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। সে রাতে আগুন গ্রাস করে নেয় হাজার হাজার যাত্রীর প্রাণ। প্রাণহানীর দিক থেকে বেসামরিক নৌ-দূর্ঘটনায় এটি হয়ে ওঠে সব থেকে কলঙ্কজনক অধ্যায়।
এমভি উইলহেম গাস্টলফ
আমরা দেখেছি বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে অনেকে বেসামরিক জাহাজও সামারিক বাহিনীর প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়েছিল। ঠিক তেমনি একটি জাহাজ ছিল এমভি উইলহেম গাস্টলফ (MV Wilhem Gustlof)। জার্মান এ জাহাজটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যাত্রী ধারণ ক্ষমতার দিক থেকে অন্যতম একটি বড় জাহাজ ছিল। মিলিটারি সার্ভিসে আসার পূর্বে জাহাজটির দীর্ঘ সময় সাধারণ যাত্রীদের পরিসেবা প্রদান করে আসছিল। পরবর্তীতে জার্মান সামরিক বাহিনীর যুদ্ধ সরঞ্জাম, রসদ, সৈন্য পরিবহন সহ নানা সামরিক প্রয়োজনে ব্যবহৃত হতে থাকে।
সর্বশেষ জাহাজটি প্রুশিয়ার বাল্টিক উপকূল আটকে পড়া জার্মান সৈন্য ও শরনার্থীদের উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়। এ উদ্ধার অভিযানটি অপারেশন হানিবল (Operation Hannibal) নামে পরিচিত। ১৯৪৫ এর ৩০ জানুয়ারি অপারেশন হানিবল এ অংশ নেওয়া এমভি উইলহেম জাহাজটি সেদিন প্রায় ১০ হাজার জন যাত্রীকে নিয়ে উত্তর জার্মানির কিলের (Keil) উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।
সম্ভাব্য আক্রমনের জন্য যথাসম্ভব সতর্কতা ও প্রস্তুতি থাকলেও যখন সোভিয়েত সাবমেরিন এস-১৩ এর টর্পেডো উইলহেম গাস্টলফের ওপর আঘাত হানে তখন করার মত বিশেষ কিছুই তাদের হাতে ছিলনা। জাহাজ থেকে তাৎক্ষণিক ভাবে সাহায্য চেয়ে বেতার বার্তা প্রেরণ করা হয়। কাছাকাছি থাকা বেসামরিক ছোট জাহাজ এবং জার্মান নৌ-বাহিনীর জাহাজগুলি যখন ডুবতে থাকা এমভি উইলহেম এর কাছে পৌঁছে তখন মাত্র ১২০০ জনের মতো যাত্রীকে বাঁচাতে সক্ষম হয়। বিশাল সংখ্যক যাত্রী বোঝাই এ জাহাজটি প্রায় ৯ হাজার যাত্রী নিয়ে তালিয়ে যায় বাল্টিক সাগরের গভীর জলে।

পরবর্তীতে এমভি উইলহেম গাস্টলফের ওপর এ আক্রমণকে ঘিরে নানা সমালোচনা-আলোচনা ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়। প্রাণহাণীর দিক থেকে জাহাজডুবির ইতিহাসে প্রায় ৯ হাজার জন যাত্রীর প্রাণ হারানোর মধ্য দিয়ে এমভি উইলহেম গাস্টলফ ইতিহাসের সবথেকে মর্মান্তিক ও ভয়াবহ জাহাজডুবি হিসেবে সবার শীর্ষে স্থান দখল করে আছে।
যুদ্ধ হোক কিংবা শান্তিকালীন সময়ই হোক প্রাণহানী সব সময়ের জন্যই দু:খজনক। সকল দূর্ঘটনা এবং সহিংসতা পেরিয়ে ছোট বড় প্রতিটি সমূদ্র যাত্রাই আমাদের জন্য হয়ে উঠুক সমৃদ্ধি, বিনোদন এবং উপভোগের।
Featured image source: rte.ie