“রাত একটার দিকে প্রথমে এলিজাবেথ স্ট্রাইডের মৃতদেহ পাওয়া যায় বার্নার স্ট্রিটে। দেখা গেল এবারো হত্যাকারী শিকারের গলায় ছুরির আঘাত বসিয়েছে। যখন এলিজাবেথ স্ট্রাইডের কাছে পৌঁছানো হয় তখনো তার গলার ধমনী হতে রক্ত ঝরছিল।”
সময়টা ১৮৮৮ সালের ভিক্টোরিয়ান যুগ। লন্ডন শহরের ইস্ট এন্ড স্ট্রিট (East End Street) এর হোয়াইটচ্যাপেল (Whitechapel) হঠাৎ সকলের আলোচনার বিষয় বস্তু হয়ে উঠেছে। যদিও হোয়াইটচ্যাপেল নিয়ে বলার মত আহামরি কিছুই নেই। শহরের কেন্দ্রে জীবন বর্ণিল এবং ঝলমলে হলেও হোয়াইটচ্যাপেলের জীবন দারিদ্র আর অন্ধকারে আবর্তিত। সময়ের সাথে শহরের এ প্রান্তে বেড়ে চলেছে জনসংখ্যার চাপ। তবুও থেমে নেই ইউরোপের নানা প্রান্ত থেকে এসে হাজির হওয়া অভিবাসীদের ঢল। যে উচ্চভিলাস নিয়ে তারা এখানে পাড়ি জমাচ্ছে লন্ডনে প্রকৃত চেহারা তার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখন তো বেঁচে থাকার মত ছোট একটা কিছু কাজ জোগাড় করাটাই শহরের মানুষের জন্য সোনার হরিণ পাবার শামিল হয়ে দাড়িয়েছে। আর নারীদের জন্য সেটি আরো কঠিন। বলতে গেলে এ অঞ্চলে পুরুষদের ছিনতাই, চুরি ডাকাতি অন্যদিকে নারীদের জন্য পতিতাবৃত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে জীবিকার প্রধান মাধ্যম। শুনতে অবিশ্বাস্য শোনালেও ইতিহাসের ঠিক এই সময়টিতে ইস্ট এন্ড (East End) এর অলিতে গলিতে প্রায় ৬২ টি পতিতালয় গড়ে উঠেছিল, যেখানে জীবিকার তাগিদে প্রায় ১২০০ নারীকে নামতে হয়েছিল এ অন্ধকার পথে।

সেই অখ্যাত ইস্ট এন্ড (East End) হঠাৎ পত্রিকার প্রধান শিরোনাম হয়ে মানুষের মুখে মুখে ঘুরছে। সেটি অবশ্য কেবল এখানকার মানুষের দু:খ দূর্দশা গল্পের জন্য নয় বরং তার থেকে বেশি কিছু। এক আতঙ্ক গ্রাস করেছে হোয়াইট চ্যাপেল, ইস্ট এন্ড সহ গোটা লন্ডনকে। রহস্যময়, বর্বর এক খুনির ত্রাস ছড়িয়ে চলেছে সারা শহরে। কে সে? কোথা থেকেই বা এলো? কি তার নাম-পরিচয়? উৎকন্ঠায় লন্ডনবাসী অপেক্ষা করতে থাকে উত্তরের আশায়।
ঘটানার সূত্রপাত
৩১ আগস্ট বাকস রো (Bucks Row) যেটি বর্তমানে ডারওয়াল্ড স্ট্রিট (Durwald Street) বলে পরিচিতি ঠিক এই জায়গাটিতেই থাকতেন ম্যারি অ্যান নিকোলস (Mary Ann Nicholls)। মধ্যবয়স্কা এ মহিলাকেও জীবিকার তাগিদে নামতে হয়েছিল দেহ বিনিময়ের ব্যবসায়। সেদিনও রাতেও তিনি অপেক্ষা করছিলেন খদ্দরের আশায়। যথারীতি একজন খদ্দের পেয়েও যান তিনি। সে রাতের খদ্দেরটি দেখতে কেমন ছিল বা তার নাম পরিচয়ের বিস্তারিত না জানা গেলেও এটুকু নিশ্চিত যে সেই খদ্দেরটিই তার জীবনের শেষ খদ্দের। যার চাহিদা কেবল দেহসুখ থেকেও বেশি কিছু। এই খদ্দের এর হাতেই নির্মম ভাবে খুন হন অ্যান নিকোলস। রাত ৩টা ৪০ নাগাদ যখন মৃত অবস্থায় অ্যান নিকোলসকে পাওয়া যায় তখন দেখা গেল তার মুখ বাজে ভাবে থেঁতলে বিকৃত হয়ে আছে, গলায় দুবার ছুরি চালানো হয়েছে। একই সাথে ছুরি চালিয়ে তলপেটের নিচের অংশ উপড়ে ফেলা হয়েছে।

খুনের মত ঘটনা এ অঞ্চলে নতুন কিছু নয়। কিন্তু এমন বর্বর বীভৎস হত্যাকান্ডে ভাষা হারিয়ে ফেলে লন্ডনবাসী। যদিও হয়ত তাদের ধারণা ছিল না যে এমন ঘটনা আরো অপেক্ষা করছে তাদের জন্য। এটি কেবল শুরু মাত্র।
অ্যান নিকোলসের হত্যাকান্ডের এক সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই দ্বিতীয় হত্যাকান্ডটি ঘটল। এবারের শিকার হানবুরি স্ট্রিটের (Hunbury Street) অ্যানি চ্যাপমান (Annie Chapman)। ৮ সেপ্টেম্বর যখন তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় তখন দেখা গেল যথারীতি তার গলায় এমনভাবে ছুরি চালানো হয়েছে যে, মাথাটি দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার মত হয়ে আছে। অন্যদিকে পেটে গভীর ক্ষত, সেখান থেকে পাকস্থলি উপড়ে ফেলা হয়েছে। হত্যাকারী অ্যানি চ্যাপমানের পেটের চামড়া এবং নাড়ি তার দুই কাঁধের ওপর রেখে দিয়ে গেছে এবং এবারও তলপেটের নিচের অংশ উপড়ে ফেলা হয়েছে।

এই হত্যাকান্ডের পর ২৮ সেপ্টেম্বর লন্ডনের সংবাদ পত্র অফিসে জ্যাক দ্যা রিপার (Jack the Ripper) নামে সাক্ষর করা “From Hell” শিরোনামে একটি চিঠি পৌঁছে যেখানে প্রেরকের পক্ষ থেকে আরো হত্যাকান্ড ঘটানোর হুমকি দেওয়া হয়। সেখান থেকেই মূলত জ্যাক দ্যা রিপার নামটি মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। নাম পরিচয়হীন এ হত্যাকারী জ্যাক দ্যা রিপার নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। লন্ডন শহর তার হুমকিতে স্তম্ভিত হয়ে যায়। শহরে আতঙ্কের সাথে নানা গুজব ছড়িয়ে পড়ে।

যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো যে, হত্যাকারী তার সাথে একটি ছোট কালো ব্যাগ নিয়ে ঘোরাফেরা করে এবং সেই কালো ব্যাগটিতেই সে তার ছুরি বহন করে। উত্তেজিত এবং আতঙ্কিত জনতা কালো ব্যাগ বহনকারী মানুষের ওপর সন্দেহ বশবর্তী হয়ে আক্রমণ চালানো শুরু করে। শহরজুড়ে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে।

পত্রিকায় হুমকির দুদিন যেতে না যেতেই ৩০ সেপ্টেম্বর একই দিনে দুটি হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। রাত একটার দিকে প্রথমে এলিজাবেথ স্ট্রাইডের (Elizabeth Stride) মৃতদেহ পাওয়া যায় বার্নার স্ট্রিটে (Berner Street)। দেখা গেল এবারো হত্যাকারী শিকারের গলায় ছুরির আঘাত বসিয়েছে। যখন এলিজাবেথ স্ট্রাইডের কাছে পৌঁছানো হয় তখনো তার গলার ধমনী হতে রক্ত ঝরছিল। তবে গলা বাদে বাকী শরীর অক্ষত ছিল। হয়ত জ্যাক দ্যা রিপার কে তার কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই কোন কারণে চলে যেতে হয়েছিল।

সে রাতেই ৪৫ মিনিট বাদে মাত্র কয়েক মিনিটের হাঁটা পথের দূরত্বে আরেকজন হতভাগ্য পতিতা নারী, ক্যাথরিন এডোসের (Catherine Eddowes) মৃতদেহ উদ্ধার করা হলো। এবার বলা যায় খুনি তার কাজ সম্পূর্ণ শেষ করে তবেই সেখান থেকে প্রস্থান করেছে। দেখা গেলো মৃতদেহের দুটি চোখের পাতা, নাক এবং ডান কানটি কেটে ফেলা হয়েছে। তার জরায়ু এবং কিডনি উপড়ে ফেলা হয়েছে। এবারো যথারীতি হতভাগ্য নারীটির নাড়ি তার কাঁধের ওপর ফেলে রাখা হয়েছে।

তবে এবার ব্যতিক্রম যে বিষয়টি সামনে এলো সেটি হলো, হত্যাকারী রক্ত দিয়ে ঘরের দরজা পর্যন্ত অনুসরন করার মত স্পষ্ট চিহ্ন রেখে গেছে। যেন সে কিছু একটা ইঙ্গিত দিতে চাইছে। রক্তের চিহ্ন ধরে যখন দরজা পর্যন্ত পৌঁছানো হলো দেখা গেলো সেখানে চক দিয়ে লেখা আছে, “The Jewes are not the men to be blamed for nothing”। কোন অজানা কারণে মেট্রপলিটন পুলিশের প্রধান স্যার চার্লস ওয়ারেন (Sir Charles Warren) সেটি মুছে ফেলার নির্দেশ দেন। ফলে বলা যায় এ রহস্যময় খুনির ধাঁধা সমাধানের একটি মূল্যবান আলামত সেখান থেকেই হারিয়ে যায়, বা নষ্ট করে দেওয়া হয়।

জোড়া খুনের ঘটনার পর আতঙ্ক গ্রাস করে ফেলে লন্ডন শহরকে। বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে পড়তে থাকে, জ্যাক দ্যা রিপার সম্পর্কে। লোকমুখে রটতে থাকে জ্যাক দ্যা রিপার একজন উন্মাদ চিকিৎসক, উন্মাদ পোলিশ অধিবাসী, রাশিয়ান জারতন্ত্র সমর্থক, এমনকি কেউ কেউ তাকে উন্মাদ ধাত্রী বলেও আখ্যায়িত করতে থাকে। তবে তার আসল পরিচয় বলা যায় অগোচরেই থেকে যায়।
অবশেষে নভেম্বরের ৯ তারিখে আবারো হানা দেয় জ্যাক দ্যা রিপার। তার এবারের শিকার ছিল ২৫ বছর বয়সী রূপবতী যুবতী মেরি ক্যালি (Mary Kelly) । মেরিকে যখন বেলা ১১ টার দিকে তার ঘরে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় তখন সে ঘরের অবস্থা ছিল ভয়াবহ। রিপারের এবারের বর্বরতা আগের সবগুলিকে ছাড়িয়ে গেছে। মেরিকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে, তার নাক, স্তন এবং হৃদপিন্ড কেটে টেবিলে রাখা হয়েছে। তার নাড়ী দিয়ে মালা বানিয়ে দেওয়ালে টানিয়ে রাখা একটি ছবিতে পরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সারা শরীরে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে আছে অজস্র আঘাতের চিহ্নে। সেদিন সকালে প্রথম যিনি মেরিকে এ অবস্থায় দেখেছিলেন তিনি ঘরের বীভৎস দৃশ্যের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছিলেন, সে ঘরের দৃশ্য তাকে সারা জীবন তাড়া করে বেড়াবে।

এবারের ঘটনার পর লন্ডন শহর ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে। বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করেন পুলিশ প্রধান স্যার চার্লস ওয়ারেন। হতভাগ্য মেরিই ছিলেন জ্যাক দ্যা রিপারের শেষ শিকার। তার ত্রাসের রাজত্ব এরপর হঠাৎ করেই মিলিয়ে যায়, ঠিক যেভাবে এটি শুরু হয়েছিল। যদিও হোয়াইটচ্যাপেলে পরবর্তীতে আরো ৬ জন নারী খুন হয়েছিলেন তবে তাদের খুনের ধরনের সাথে জ্যাক দ্যা রিপারের খুনের ধরনের মিল না থাকায় সন্দেহভাজনের তালিকা হতে তাকে বাদ দেওয়া হয়।
কে হতে পারে জ্যাক দ্যা রিপার?
জ্যাক দ্যা রিপারকে আটকাতে এবং তার আসল পরিচয় খুঁজে বের করতে তদন্তে নেমেছিল হোয়াইট চ্যাপেলের গোয়েন্দা বিভাগ, লন্ডন সিটি পুলিশ এবং স্কটল্যান্ড ইয়র্ড (Scotland Yard)। গোটা তদন্ত কার্যক্রমে প্রায় দুই হাজার মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করে, ৩০০ জন লোকে ওপর নজরদারি চালিয়ে সেখান থেকে ৮০ জনকে গ্রেফতার করে। তবে দু:খের বিষয় হলো আজ পর্যন্ত সুস্পষ্টভাবে এই হত্যাকান্ডের পেছনে জড়িতদের চিহ্নিত কর যায় নি। জ্যাক দ্যা রিপারের আসল পরিচয় বের করতে আজও পর্যন্ত গবেষণা এবং অনুসন্ধান চলছে যা “রিপারতত্ত্ব” বলে পরিচিত। গোটা অনুসন্ধান কার্যক্রম এতটা গভীর ও ব্যাপক যে সংক্ষেপে তাকে একত্রিত করা দূরূহ ব্যাপার। এ অনুসন্ধান কার্যক্রমে কয়েকজনকে সম্ভাব্য সন্দেহভাজন হিসেবে দাবী করা হলেও পর্যাপ্ত স্বাক্ষ্য প্রমানের অভাবে আজও নির্দিষ্টভাবে কাউকে দায়ী করা সম্ভব হয়নি। সেক্ষেত্রে জ্যাক দ্যা রিপার হতে পারে এমন সম্ভাব্য কয়েকজনকে নিয়ে দেখে নিতে পারি।
উইলিয়াম হেনরি (William Henry)
জ্যাক দ্যা রিপার তদন্ত কার্যক্রমের প্রথম সন্দেহভাজন হিসেবে যে নামটি আসে সেটি হলো উইলিয়াম হেনরি। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল লন্ডন থেকে দূরে স্কটল্যান্ডের ড্যান্ডি (Dundee) শহরে স্ত্রী এলিনকে (Ellen) হত্যার দায়ে। জ্যাক দ্যা রিপার হিসেবে তাকে সন্দেহ করার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। যেমন স্কটল্যান্ডে তার বাসা থেকে কিছু গ্রাফিতি খুঁজে পাওয়া যায় যেখানে লেখা ছিল “Jack Ripper is at the back of this door” অন্য একটিতে লেখা ছিল “Jack Ripper is in the sellar (sic)”।অনুসন্ধানে আরো বেরিয়ে আসে যে হেনরি সেই পাঁচটি হত্যাকান্ডের সময় লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপেলেই ছিল।

অন্যদিকে বেশ কিছু কারণে আবার জোরালো ভাবে হেনরিই যে জ্যাক দ্যা রিপার সেটি প্রমানেও কিছুটা ফাঁক থেকে গেছে। যেমন স্ত্রী হত্যার দায়ে তার মৃত্যুদন্ড হলেও বিচার চলাকালীন সময়টাতে সে নিজেকে বরাবরই নির্দোষ দাবী করে। তবে মৃত্যুদন্ড কার্যকরের আগের দিন সে সর্বপ্রথম নিজ দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তি প্রদান করে। কিন্তু স্বীকারোক্তির কোথাও সে নিজেকে জ্যাক দ্যা রিপার বলে দাবী করেনি বা লন্ডনের হত্যাকান্ডগুলোর ব্যাপারেও কিছু বলেনি। অন্যদিকে গোয়েন্দাগণ পরবর্তীতে জ্যাক দ্যা রিপার হবার সম্ভাব্যতা যাচাই করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সেখানেও সে জ্যাক দ্যা রিপার হতে পারে এমন কোন সম্ভাবনা বা প্রমাণ পাওয়া যায় নি।
জোসেফ বার্নেট (Joseph Barnett)
পরবর্তী সন্দেহভাজন হিসেবে যার নাম আসতে পারে তিনি হলেন জোসেফ বার্নেট (Joseph Barnett)। প্রত্যক্ষদর্শীদের দেওয়া বর্ণনার সাথে জোশেফ বার্নেটের অনেক বেশি সাদৃশ্য পাওয়া যায়। সে সর্বশেষ হত্যাকান্ডের শিকার মেরি ক্যালির সাথেই থাকত। মেরি ক্যালি মারা যাবার ১০ দিন আগে তাদের সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়। বলতে গেলে জোশেফ বার্নেটকে জ্যাক দ্যা রিপার হিসেবে সন্দেহ করার পেছনে মেরি ক্যালির সাথে তার সম্পর্ক এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের দেওয়া বর্ণনার সাথে তার শারীরিক গড়নের মিলকেই দায়ী করা হয়। কিন্তু এর বাইরে আর কোন স্বাক্ষ্য প্রমাণ নেই যা বার্নেটকেই জ্যাক দ্যা রিপার বলে চিহ্নিত করে।

অ্যারন কস্মিনিস্কি (Aaron Kosminski)
জ্যাক দ্যা রিপার হবার সম্ভাব্যতায় যাকে তালিকায় সবার উপরে রাখা যায় তিনি হলেন অ্যারন কস্মিনিস্কি (Aaron Kosminiski)। অ্যারন ছিল মানসিকভাবে অপ্রকৃতস্থ এবং জীবনের শেষ দিনগুলো তাকে মানসিক হাসপাতালেই কাটাতে হয়। লন্ডন পুলিশের বেশিরভাগ অফিসারই প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে অ্যারনকেই নির্দেশ করেছিল। জ্যাক দ্যা রিপারের চতুর্থ শিকার এলিজাবেথ স্ট্রাইডের মৃতদেহের পাশ থেকে একটি শাল উদ্ধার করা হয়। রক্তমাখা শালটিতে কিছু বীর্যের দাগও পাওয়া যায়। ঘটনার সময় DNA পরীক্ষা করার মত সুযোগ ছিল না। কিন্তু ঘটনার এতোদিন বাদে ২০০৭ সালে এসে সেই শালটির বীর্যের দাগ থেকে DNA পরীক্ষা করে তার সাথে অ্যারনের সম্পর্ক পাওয়া গিয়েছে, যা প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে তাকে আরো জোরালো ভাবে চিহ্নিত করছে।

তবে এক্ষেত্রেও তাকে রিপার হিসেবে অকাট্যভাবে প্রমাণের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। যেমন চাদরের DNA এর সাথে অ্যারন কস্মিনিস্কির বর্তমান সময়ের জীবিত বংশধরদের ডিএনএ এর নমুনা মিলিয়ে দেখা হয়েছে। এ পদ্ধতিতে শতভাগ নিশ্চিতভাবে একক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। অন্যদিকে মানসিক হাসপাতালে তার দেখভালের দায়িত্বে থাকা নার্স এবং চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে জানানো হয় সে মানসিকভাবে অপ্রকৃতস্থ হলেও জ্যাক দ্যা রিপারের মত আগ্রাসী নয়। এমনকি মানসিক হাসপাতালে থাকাকালীন দীর্ঘ সময়ে সে কারো সাথে সহিংস কোন বিবাদেও জড়ায়নি। ফলে নিশ্চিতভাবে এটি বলা সম্ভব নয় যে, অ্যারন কস্মিনিস্কিই জ্যাক দ্যা রিপার।

রিপারের গায়েব হওয়া নিয়ে কিছুই জানা যায়না; ধারণা করা হয় উনি নিজেই হয়তো মারা গিয়েছিলেন; উনি হয়তো অভিবাসী ছিলেন, নিজ দেশে ফিরে গেছেন এমনটাও মনে করেন অনেকে। ফিকশন, সাহিত্য, মিডিয়া, রেডিও, পাব, বার, স্টেশন, গলফ কোর্ট, টেনিস লন – সর্বত্র জ্যাকময় হয়ে গিয়েছিলো! তিনবছর সময়কাল ( হয়তো কাল্পনিক), কিন্তু তাতেই সবার মনে হিম ধরিয়ে দিয়েছিলেন এই “হোয়াইটচ্যাপেল কিলার”। লন্ডনবাসী এখনো জ্যাককে “লেদার এপ্রোন” কিলার নামেই জানে!
জ্যাক দ্যা রিপারের খোঁজে আজও তদন্ত অনুসন্ধান চলছে। তবে সব গোলকধাঁধা পেরিয়ে এ রহস্য কি আলোর মুখ দেখতে পাবে কি না সময়ই হয়ত সে উত্তর দিতে পারবে।
নোটঃ খুন হওয়া বিভৎস লাশের ছবিগুলো ইচ্ছাকৃতভাবেই এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
Featured image source: www.viator.com