দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নাৎসি বাহিনীর বর্বরতার কথা বলতে গেলেই উঠে আসে জার্মান বন্দী শিবিরগুলোর কথা। এ শিবির গুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে নানা উপন্যাস এবং সিনেমা যেখানে ফুটে উঠেছে বন্দী শিবিরগুলোর বীভৎস এবং পৈশাচিক কর্মকান্ড। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের এতোগুলো বছর পেরিয়ে আজও সে বর্বরতার ইতিহাস আমাদের শিহরিত করে।
প্রথম কনসেন্ট্রেশন (Concentration) ক্যাম্পটি স্থাপিত হয়েছিল ১৯৩৩ সালে জার্মানির ডাচাওতে (Dachau)। হেনরিখ হিমলার (Henrik Himmler) এর অধীনে ক্যাম্পটিতে ধরে আনা হতে থাকে হিটলার ও জার্মান বিরোধী রাজনৈতিক দলমতের অনুসারী, ইহুদি, সমকামী, যিহবার সম্প্রদায়, প্রতিবন্ধীসহ এমন সকলকে যাদেরকে নাৎসিরা অবাঞ্চিত বা হুমকি মনে করতো।

১৯৩৯ সালে যখন পোলান্ড নাৎসি আক্রমনের শিকার হয় সে সময় ইহুদি সম্প্রদায়ে প্রচুর মানুষ সেখানে বসবাস করত। ফলে দেখা যায় স্বাভাবিকভাবেই অনেকগুলি কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প গড়ে উঠেছিল পোলান্ডের মাটিতে। ১৯৪১ সালের থেকে এসব বন্দী শিবিরগুলোতে নির্মম হত্যাকান্ড শুরু হয়। নামমাত্র খাবার ও পানীয় সরবরাহ করে এসব বন্দী শিবিরের বন্দীদেরকে শ্রমিক-দাস হিসেবে কাজে লাগানো হতো। মানবেতর জীবন এবং নাৎসিদের অমানবিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে অনেকেই আলিঙ্গন করে নেন নির্মম মৃত্যুকে। আজ আমরা ইতিহাসের ১০টি কুখ্যাত কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পকে আমাদের আলোচনায় তুলে ধরবো।
অশউইৎজ বিরকেনাও
জার্মান বন্দী শিবিরের মধ্যে অন্যতমভাবে আলোচিত ক্যাম্পগুলির একটি হলো অশউইৎজ বিরকেনাও (Auschwitz Birkenau)। পোলান্ডের এই বন্দী শিবিরে শুরুর দিকে আটক করে রাখা হতো পোলান্ডের রাজনৈতিক পার্টির নেতা কর্মীদের। আয়তনের দিক থেকে বিশাল এই ক্যাম্পটিতে বন্দীদের ওপর দিনরাত চলত মানসিক এবং শারিরীক নির্যাতন। অনেকেই এই বন্দীশালা থেকে পালাবার চেষ্টা করলে তাদেরকে ধরে এনে আবারো এ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হত। বন্দীদের ওপর অমানবিক এ নির্যাতনের জন্য পরবর্তীতে ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা সেনা অফিসার সহ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধপরাধের মামলা করা হয়। জার্মান নাৎসি বাহিনীর অমানবিক নির্যাতনের মুখে অশউইৎজ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে প্রাণ হারায় প্রায় ১.১ মিলিয়ন মানুষ।

ট্রেবলিঙ্কা নিধন ক্যাম্প
শুরুর দিকে বেশিরভাগ জার্মান ক্যাম্পগুলো কেবল সাধারণ বন্দীশালা হিসেবে ব্যাবহারের জন্যই তৈরি হয়েছিল। সে সময় জাতিগত নিধনের পরিকল্পনা জার্মান নাৎসিদের ছিল না। সময়ের সাথে প্রতিটা ক্যাম্পেই পৈশাচিক নির্যাতন ছড়িয়ে পড়ে। নাৎসিরা মেতে ওঠে বীভৎস মৃত্যুখেলায়। তবে এসব ক্যাম্পের মধ্যে ব্যতিক্রম ছিল ট্রেবলিঙ্কা নিধন ক্যাম্প (Treblinka Extermination Camp)। এই ক্যাম্পটি তৈরিই করা হয়েছিল এখানে ধরে আনা বন্দীদের চিরতরে পৃথিবীর বুক থেকে সরিয়ে দেবার মত করে। ১৯৪২ সালের ২৩ জুলাই ক্যাম্পটি ওয়ারশ্য (Warsaw) এর কাছে নির্মান করা হয়েছিল।
কমপক্ষে প্রায় ৯ লক্ষ ইহুদি বন্দীকে ট্রেবলিঙ্কা ক্যাম্পের বিশেষায়িত গ্যাস চেম্বারে ঢুকিয়ে হত্যা করা হয়। ক্যাম্পটির দায়িত্বে থাকা সৈনিকরা প্রতিনিয়ত দূর্বল বা শ্রম দিতে অক্ষম এমন বন্দীদের আলাদা করে ফেলত। পরবর্তীতে তাদেরকে গ্যাস চেম্বারে ঢুকিয়ে হত্যা করা হতো। ক্যাম্পের অন্যান্য বন্দীদের দিয়েই গ্যাস চেম্বারে মৃত বন্দীদের পুড়িয়ে ফেলার কাজে লাগানো হতো। ইহুদি ছাড়াও প্রায় ২০০০ জিপসী এই ক্যাম্পটিতে প্রাণ হারায়।

বেলজেক
বেলজেক (Belzek) পোলান্ডে অবস্থিত একটি নাৎসি ক্যাম্প যেখানে সর্বপ্রথম গ্যাস চেম্বারে হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছিল। ১৭ মার্চ ১৯৪২ সালে এই ক্যাম্পটি চালু হয়েছিল মূলত ইহুদি নিধনের পাশাপাশি ঐ অঞ্চলটিতে জার্মানি কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে। তবে ইহুদি ধর্মাবলম্বী ছাড়াও বহু সংখ্যক পোলিশ ও রাশিয়ান বাসিন্দারে ধরে আনা হয়েছিল এ ক্যাম্পটিতে। সেখানেই মৃত্যু অবধি নির্মম নির্যাতন সহ্য করে যেতে হয় তাদেরকে।
ক্যাম্পটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিল জার্মানির বিখ্যাত এস এস বাহিনী। তাদের নেতৃত্বেই নির্বিচারে প্রাণ হারায় প্রায় ৫ থেকে ৬ লক্ষ ইহুদি, পোলিশ, রাশিয়ান এবং জিপসি অধিবাসী। বীভৎসতার দিক থেকে বেলজেক অন্যতম নৃসংশ একটি জার্মান নাৎসি বন্দী শিবির হিসেবে আজও ইতিহাসের পাতায় স্থান দখল করে আছে।

মাজদানেক
মাজদানেক (Majdanek) পোলান্ডে অবস্থিত অন্য একটি ক্যাম্প যেটি শুরুতে ২৫ হাজার যুদ্ধবন্দী রাখার মত উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছিল। পরবর্তীতে কেইভ (Kiev) এর যুদ্ধের পর প্রায় ৫০ হাজার সৈন্য জার্মানদের হাতে আটক হয়। ফলে ক্যাম্পটিকে সেপ্টেম্বর ১৯৪১ সালে পুনরায় নতুন করে গড়ে তোলা হয়। ডিসেম্বর আসতে না আসতে ক্যাম্পের বন্দী সংখ্যা ১ লক্ষ ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। মার্চে যা ২ লক্ষ ৫০ হাজারে যেয়ে পৌঁছে।
এটি ছিল একটি লেবার ক্যাম্প কাজেই জার্মানরা বন্দীদের সংখ্যা নিয়ে তেমন মাথা ঘামাতো না। বরং প্রয়োজনীয় শ্রমের যোগান দিতে যত বেশি সংখ্যক বন্দী সংগ্রহ করাই ছিল তাদের লক্ষ্য। নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গাদাগাদি করে বন্দীদের থাকতে হতো। রেশন হিসেবে খুবই সামান্য প্রায় নামে মাত্র খাবার সরবরাহ করা হতো তাদের জন্য। প্রচন্ড শীতে অপর্যাপ্ত খাদ্য এবং অমানুষিক পরিশ্রমের মুখে প্রাণ হারায় প্রায় ৩ লক্ষ ৬০ হাজার মানুষ।

চেল্মনো
চেল্মনো (Chelmno) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে অন্যতম একটি নৃশংস জার্মান বন্দী শিবিরি যেটি নির্মানের মূখ্য উদ্দেশ্য ছিল বেলজেক ডেথ ক্যাম্পটির মত ক্যাম্পের বন্দীদের হত্যা করা। পোলান্ডের ঘেটো (Ghetto) অঞ্চলটিতে জার্মান কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং সেখানকার ইহুদি সহ সকল জার্মান বিরোধীদের নিশ্চিহ্ন করে দেবার লক্ষ্যে ১৯৪১ সালে ক্যাম্পটি তার পৈশাচিক যাত্রা শুরু করে। অস্ট্রিয়া (Austria), বোহেমিয়া (Bohemia), জার্মানি (Germany), হঙ্গেরি (Hungery), লুক্সেমবার্গ (Luxembourg), ও মোরাভিয়া (Moravia) থেকে ইহুদি এবং জিপসিদের ধরে এনে এ ক্যাম্পে বন্দী করা হয়।
ক্যাম্পটিতে অবস্থানরত বন্দীদের ওপর বিভিন্ন ধরনের মেডিকেল পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়। পোলান্ডের দাবী অনুযায়ী ক্যাম্পটিতে নৃশংস ও অমানবিক নির্যাতন এবং জার্মান চিকিৎসকদের চালানো মেডিকেল পরীক্ষায় প্রাণ হারায় ৩ লাখ ৪০ হাজার বন্দী।

সবিবর
সবিবর (Sobibor) বন্দীশালাটি গড়ে তোলা হয়েছিল পোলিশ শহর লোদায়া (Wlodawa) এর কাছে। এটি মূলত বেলজেক ক্যাম্পটির সম্পূরক হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছিল যেখানে পোলান্ডের অন্যান্য ক্যাম্প বিশেষ করে ঘেটোর চেল্মনো ক্যাম্পটি থেকে বন্দীদের স্থানান্তরিত করে আনা হতো। সর্বপ্রথম যেসব ক্যাম্পে গ্যাস চেম্বারে ঢুকিয়ে হত্যা চালানো পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করা হয়েছিল তার মধ্যে সবিবর অন্যতম।
ক্যাম্পে আসা বন্দীদেরকে শারিরীকভাবে শ্রম প্রদানে সক্ষমতার উপর ভিত্তি করে দুটি দলে ভাগ করে ফেলা হতো। দূর্বল দলটিকে সাথে সাথে গ্যাস চেম্বারে ঢুকিয়ে হত্যা করে ফেলা হতো। অন্যদিকে তুলনামূলকভাবে শক্তিসামর্থবান বন্দীদেরকে দিয়ে কাজ করানো হতো যতক্ষণ না পর্যন্ত অতিরিক্ত কাজের চাপে ক্লান্তি অবসাদে ভেঙে পড়ে তারা মারা যাচ্ছে। ১৯৪৩ সালের ১৪ অক্টোবর বন্দীরা ক্যাম্পের সৈন্যদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। মাত্র ৫০ জন সেখান থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও এ বিদ্রোহের ফলাফল ছিল কার্যকরী। তার কিছুদিন পরেই জার্মানরা ক্যাম্পটি বন্ধ করে চলে যায়।

সবিবর ক্যাম্পটিতে জার্মানদের হাতে প্রাণ হারায় প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার মানুষ। পোলান্ডের সবিবর ক্যাম্পটিতে বর্তমানে একটি স্মৃতি সৌধ রয়েছে যেখানে প্রতি বছর অনেক পর্যটক ভীড় জমায়।
ডাচাও
ডাচাও (Dachau) ক্যাম্পটি গড়ে উঠেছিল মিউনিখ শহরে ১৯৩৩ সালে। এখানকার প্রথম বন্দীরা ছিল মূলত নাৎসিবাদের বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। আর ভাগ্যের পরিহাসে এখানকার শেষ বন্দী ছিল হিটলারের এস এস বাহিনীর অফিসাররা যারা কিনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ক্যাম্পগুলোতে পৈশাচিক বর্বরতা চালিয়েছিল। ১৯৪৫ সালে যুদ্ধপরাধের দায়ে বিচারের জন্য অপেক্ষামান জার্মান সৈনিক ও অফিসারদের তাদেরই তৈরি বন্দীশালাটিতেই বন্দী করে রাখা হয়েছিল।
১৯৪০ সালের আগস্ট থেকে বিপুল সংখ্যায় ইহুদি বন্দীদেরকে এ ক্যাম্পে নিয়ে আসা হতে থাকে। ইহুদি বন্দীদের জায়গা সংকুলান না হওয়ায় দক্ষিণ জার্মানির আশেপাশে এবং অস্ট্রিয়া মিলিয়ে আরো প্রায় ১০০ টি সাব ক্যাম্প তৈরি করা হয়। ডাচাও ক্যাম্পটি থেকেই জার্মানির অন্যান্য ক্যাম্পগুলো প্রশাসনিক কার্যক্রম ও নির্দেশনা পরিচালনা করা হতো। ১৯৪৫ সালের মধ্যে এ ক্যাম্পটি থেকে প্রাণ হারায় প্রায় ২ লাখ ৪৫ হাজার বন্দী।

মাউথাজেন জিউসেন
অস্ট্রিয়ায় অবস্থিত মাউথাজেন জিউসেন (Mauthausen Gusen) ক্যাম্পটি চালু হয় ১৯৩৮ সালে। এটি ছিল গ্রেড-৩ ক্যাম্প যেখানে উচ্চ পর্যায়ের বন্দীদের আটক করে আনা হতো। অন্যান্য ক্যাম্পগুলোতে সাধারণত সকল ধরণের বন্দীদের একসাথে আটকে রাখা হতো। অন্যদিকে গ্রেড-৩ ক্যাম্পের বিশেষত্ব হলো এ ধরণে ক্যাম্পে বুদ্ধিজীবি, উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি, সমাজের উচ্চ পর্যাযের মানুষদের ধরে আনা হতো যারা নাৎসি মতবাদকে সমর্থন করতেন না।
ক্যাম্পটির বাসিন্দাদের দিয়ে অমানুষিক পরিশ্রম করানো হতো যার ফলশ্রুতিতে একটা পর্যায়ে ক্লান্তি অবসাদে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তেন তারা। ক্যাম্পটি দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের প্রায় শেষ পর্যন্ত চালু ছিল। মিত্র বাহিনীর দ্বারা মুক্ত হওয়া সর্বশেষ ক্যাম্প হচ্ছে এটি। বন্ধ হবার পূর্বে এ ক্যাম্পটিতে প্রাণ হারায় প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার মানুষ।

বার্জেন বেলসেন
বার্জেন বেলসেন (Bergen Belsen) জার্মানির পশ্চিমে অবস্থিত একটি বন্দীশিবির যেটি আকৃতিতে অন্যান্য বন্দী শিবিরের তুলনায় বলা চলে অনেক ছোট ছিল। এখানেও মাউথাজেন ক্যাম্পটির মতো কেবল উচ্চ পর্যায়ের ইহুদিদের ধরে আনা হতো। তবে তুলনামূলকভাবে এ ক্যাম্পে বন্দীদের ওপর নির্যাতন কম হতো। ক্যাম্পটির বন্দীরা ছিল যারা আন্তর্জাতিকভাবে বিখ্যাত বা পরিচিত।
বার্জেন বেলসন ক্যাম্পটির উদ্দেশ্য ছিল এসব প্রখ্যাত বন্দীদের বিনিময়ে শত্রুর হাতে আটক জার্মান সৈনিক বা অফিসারদের বন্দী বিনিময় করা। একারণে এ ক্যাম্পটি হত্যাযজ্ঞ থেকে তুলনামূলকভাবে বিরত ছিল। তবে তা সত্ত্বেও পর্যাপ্ত খাবার, আবাসন এবং চিকিৎসা সেবার অভাবে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারায় প্রায় ৫০ হাজার বন্দী। ১৯৪৫ সালে যখন মিত্র বাহিনী ক্যাম্পটির দখল নেয় তখন ক্যাম্প থেকে প্রায় ১৩ হাজার বন্দীর লাশ উদ্ধার করা হয়।

বিউচেনওয়াল্ড
বিউচেনওয়াল্ড (Buchenwald) আয়তনের দিক থেকে ডাচাও এর পর দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্দি শিবির। মিত্র বাহিনী দ্বারা দখলে নেওয়া ক্যাম্পগুলোর মধ্যে এটিই প্রথম। ১৯৩৭ সালের জুলাইতে এ ক্যাম্পটি স্থাপন করা হয়। ক্যাম্পটিতে বন্দী হিসেবে আটক করে আনা হয় কমিউনিস্ট (Communist), ফ্রিমেশন (Freemason), সোভিয়েত (Soviet), স্লাভ (Slavs),ইহুদি, যোভান সম্প্রদায়, সমকামী সহ সাধারণ অপরাধীদের।
বন্দীদেরকে ক্যাম্পে শ্রমিক হিসেবে নানা কাজে ব্যবহার করা হতো। বিশেষ করে তাদেরকে অস্ত্র তৈরির কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজে লাগানো হতো। ১৯৪২ সালের দিকে ক্যাম্পের বন্দীদের ওপর বিভিন্ন মেডিকেল পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো শুরু হয়। অপুষ্টি, খাবারের অভাব, ফাঁসি এবং মেডিকেল পরীক্ষার বলি হয়ে প্রাণ হারায় প্রায় ৩৩ হাজার ৪৬২ জন বন্দী। অবশেষে মিত্র বাহিনী এসে ক্যাম্পটি দখল করে নেয়। মিত্র বাহিনী দ্বারা সর্বপ্রথম উদ্ধার হওয়া ক্যাম্প হিসেবে এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।

যুদ্ধ সবসময়ের জন্যই বিভীষিকাময়। একটি যুদ্ধে প্রকৃত অর্থে কোন পক্ষই জয়ী হয় না। কারণ যে প্রাণহানী ঘটে যুদ্ধের দ্বারা কোন বিজয় দ্বারা তার ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব হয় না। মানবজাতি ইতিমধ্যেই দুটি ভয়াবহ বিশ্বযুদ্ধের সাক্ষী হয়েছে। আজও আমরা এ যুদ্ধের প্রভাব বয়ে নিয়ে চলেছি আমাদের সাথে। এখনি সময় সচেতন হবার নতুবা আরেকটি বিশ্বযুদ্ধ হয়ত আমাদের অস্তিত্বকেই চূড়ান্ত ঝুঁকির মুখে ফেলবে। সকল সহিংসতা, বর্বরতাকে পেছনে ফেলে শান্তি ও সমৃদ্ধি নেমে আসুক পৃথিবীতে।
feature image source: BAOMOI.COM